টিউন করেছেন : | প্রকাশিত হয়েছে : 22 September, 2013 on 11:43 am | 127 বার দেখা হয়েছে | Favorite 1



আমি যখন সাপ্তাহিক যায় যায় দিনে নিয়মিত লিখতাম, সেই ৯০

দশকের শেষ দিকে, তখন এমন কিছু ফিচার লিখেছিলাম

যেগুলো তখনকার মানুষ কল্পকাহিনী বলে ভাবতেন। যেমন

আমি লিখেছিলাম, ঈদের সময় প্রবাসী ছেলেমেয়েরা ভিডিও

সেশনের মাধ্যমে দেশে অবস্থানরত মা-বাবা'র সাথে ঈদের আনন্দ

ভাগাভাগি করে নিতে পারবে। আজকের স্কাইপের

যুগে ছেলেমেয়েরা বুঝতেই পারবে না, সেই সময়টা কেমন ছিল;

যেমনটা এখনকার ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারবে না,

ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে ফুজি ফিল্মের

দোকানে গিয়ে প্রিন্ট করার আনন্দ/বেদনা কতটুকু!

আরেকবার একটি মেয়েকে ফলো করতে করতে হারিয়ে ফেললাম

(কি, হাসি পাচ্ছে?)! তখন লিখেছিলাম, পৃথিবীতে এমন

একটি ডাটাবেজ কেন নেই, যেখানে ছবি সহ নাম থাকবে, আর

আমরা চাইলেই কাউকে খুঁজে পেয়ে যাবো! আজকের ফেসবুকের

প্রজন্ম কখনো কি সেই বেদনা কিংবা না-পাওয়ার টানটুকু অনুভব

করবে?

এমন আরো অনেক কিছু বলা যাবে, যেগুলো আমরা এখন ব্যবহার

করছি। সেগুলো নিয়ে লেখা আমার উদ্দেশ্য নয়। আজকের লেখার

মূল বিষয়, আমার অনেক দিনের একটি ইচ্ছা পূরন এবং সেই অনুভূতিটুকু

সবার সাথে শেয়ার করা। শিরোনাম দেখেই নিশ্চয়ই

অনেকে বিষয়টি ধরতে পেরেছেন।

গুগল এই পৃথিবীতে অনেক কিছু করছে, এবং করার চেষ্টা করছে।

সিলিকন ভ্যালির কোম্পানীগুলোর এই এক রোগ (ইতিবাচক

হিসেবে)। যখন পকেটে অনেক টাকা থাকে, টাকা রাখার

জায়গা থাকে না, তখন যত্তসব ফিউচারিস্টিক

প্রজেক্টে বিনিয়োগ করে। এটা যে শুধু গুগল করেছে তা নয়।

অ্যাপল করছে। এবং নিকট অতীতেই ইয়াহু করেছে, এইচ-পি, জেরক্স,

মাইক্রোসফট, বেল ল্যাব, সিসকো - কে করে নাই?

সিসকো তো পুরো সিলিকন

ভ্যালিকে পাল্টে দিতে চেয়েছিল। বিশাল বিশাল সব

প্রজেক্ট। তারপর টাকা যখন কমে যায়, তখন সেই প্রজেক্টগুলোর মৃত্যু

হয়। এমন অনেক প্রজেক্ট আমার জীবনেই দেখে ফেলেছি। এখন গুগল

হাঁটছে ওই পথে।

গুগল এমন কিছু প্রজেক্টে হাত দিয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগই

গোপন গবেষণা। আর এগুলোকে বলা হচ্ছে এক্স-প্রজেক্ট।

এগুলো কোথায় হয়, কিভাবে হয়- সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই

জানা যায় না। তেমন একটি প্রজেক্ট হলো চালকবিহীন গাড়ি।

এটা এখন আর এক্স-প্রজেক্ট নেই - কারণ এটা এখন প্রকাশ

পেয়ে গেছে। সিলিকন ভ্যালির রাস্তায় এই

গাড়িগুলো দেখা যাচ্ছে।

অনেক দিন ধরেই ইচ্ছে ছিল, ওই গাড়িতে চড়ার। বিভিন্ন

দিকে চেষ্টা করে সুযোগটা হচ্ছিল না। এটা যেহেতু এখনও

বাজারে আসেনি, এবং বিশেষ গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে,

তাই অন্য কারো কাছে এটা প্রকাশ করা হচ্ছে না। গত কয়েকদিন

চেষ্টা করার পর কাল একটি সুযোগ পাওয়া গেলো। গুগলের

যে ভবনটিতে এই গাড়িগুলো রাখা হয়, সেটাও তুলনামূলকভাবে কম

উন্মুক্ত। কিন্তু কেউ চাইলে সহজেই বের করতে পারবে, কোথায়

থাকে গাড়িগুলো। আমি সেই ভবনের

পার্কিং লটে দুটো গাড়ি পেয়ে গেলাম। যে প্রকৌশলী ওই

গাড়িগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছেন, তাদের সাথে একটু

কথা বলা শুরু করলাম। কিছুতেই তারা কিছু বলতে চায় না। তারপর

বেশ কিছুক্ষণ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে, একটা সমঝোতায়

আসা গেলো। শর্ত হলো, আমি গাড়ির ভেতরে কোনও

ছবি তুলতে পারবো না।

সাদা রঙের এসইউভি (SUV)। গাড়ির টেস্ট ইঞ্জিনীয়ার মার্ক

আমাকে গাড়িতে উঠে বসতে বললো। মার্ক ড্রাইভিং সীটে,

তার পাশে আমি। যদিও মার্ক ড্রাইভিং সীটে বসেছে, কিন্তু

সে গাড়ি চালাবে না। গাড়ি যদি ঠিক মতো কাজ না করে,

তাহলে তখন সে হাত লাগাবে। গাড়িতে উঠে মার্ক

আমাকে বললো, তুমি ভয় পাচ্ছো না তো?

আমি হাসতে হাসতে বললাম, নাহ ভয় পাচ্ছি না। আমি সত্যি ভয়

পাচ্ছিলাম না। একটা হিসাব করে রেখেছিলাম যে,

গাড়িটি বড়জোর আর কত গতিতেই যাবে? ৩০ থেকে ৪০ মাইল/

ঘন্টা। এই গতিতে যদি কোনও কিছুকে আঘাত করে, খুব

বেশি হলে আমার হাত-পা কিছু ভাঙবে। মারা যে যাবো না,

তা মোটামুটি বলা যায়। দূর্ঘটনার মাত্রাটা মাথায় নিয়েই

আমি চালকবিহীন গাড়িতে উঠার মানসিক

প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।

গাড়িতে ডিরেকশন দেয়া আছে কোন কোন সড়ক

হয়ে সে ঘুরে আসবে। জিপিএস এবং গুগল ম্যাপ লাগানো। চালু

করার একটু পরেই গাড়ি নিজের মতো পার্কিং লট

থেকে পেছনের দিকে যেতে শুরু করলো। আমি মার্ককে বললাম,

তুমি কিছু করছো না তো?

মার্ক তার হাত বুকের উপর আটকে রেখে বললো, আমি কিছুই

করছি না। গাড়িটি নিজে নিজেই পেছনে গেলো। তারপর

আস্তে করে বাঁয়ে ঘুরে পার্কিং লটের ভেতর চলতে শুরু করলো।

আমার বুকের ভেতর টিপ টিপ করছে। গাড়িটি ঠিক কী করে,

সেটাই আমার দেখার চেষ্টা। গাড়িটির উপর একটি রাডার

রয়েছে, যা বেশ জোরে ঘুরতে থাকে। তার কাজ হলো,

চারপাশের সবকিছু সম্পর্কে একটি ধারনা নেয়া। গাড়িটির

চারপাশে কতদূরে আর কতগুলো গাড়ি আছে,

কিংবা সামনে কোনও বাঁধা আছে কিনা,

কিংবা রাস্তা থেকে কতটা ভেতরে আছে, কোন

লেনে আছে ইত্যাদি সবকিছু মুহুর্তেই পরিমাপ করা হচ্ছে;

এবং সেটা প্রতিনিয়ত চলছে।

গাড়িটি পার্কিং লট থেকে মূল রাস্তায় ওঠার

আগে গতি কমালো। আমি মার্কের পায়ের দিকে নজর

রাখছিলাম। না, ও ব্রেক করেনি।

গাড়ি গতি কমিয়ে আস্তে করে মূল রাস্তায় ওঠে গেলো।

এবং কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই গতি বাড়িয়ে দিল।

আমি মাথা ঘুরিয়ে ওডোমিটারের দিকে নজর রাখলাম। গতির

কাঁটা বাড়তে থাকে।

কয়েক শ ফুট যাওয়ার পরেই ট্রাফিক লাইট।

গাড়িটি আস্তে করে গতি কমিয়ে থেমে গেলো।

আমি মার্ককে জিজ্ঞেস করলাম,

গাড়িটি কিভাবে বুঝলো যে সামনে ট্রাফিক লাইট রয়েছে?

আর ওখানে লাল নাকি সবুজ সেটাও বুঝলো কিভাবে?

মার্ক মাথা চুলকিয়ে বললো, পুরো লজিকগুলো আমি এখনও

জানিনা। আমাদেরকে সেটা জানানো হয়নি। আমাদেরকে কিছু

টেস্ট কেস দিয়ে দেয়া হয়েছে; আমরা সেটাই করে যাচ্ছি।

আমি বললাম, তুমি কি টেস্ট রেজাল্ট দেখতে পাও?

উত্তরে মার্ক বললো, নাহ আমি দেখতে পাই না। মেকানিক্যাল

কোনও ঝামেলা হলে আমি বুঝতে পারি। আর রাস্তার

পুরো লজিক

এবং ডাটা সরাসরি সে ডাটা সেন্টারে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

ওখানে বসেই তারা বুঝতে পারছে, গাড়িটে কত ডিগ্রী টার্ন

নেয়ার কথা, কিন্তু আসলে কতটুকু নিয়েছে।

লাল বাতি সবুজ হলো। গুগলের মূল

রাস্তা অ্যাম্পিথিয়েটারে উঠলো।

ভোঁ করে গতি বাড়িয়ে পুরো নিয়ন্ত্রণে চলে গেলো গাড়িটি।

আমি ম্যাপের উপর খেয়াল রাখছিলাম। রাস্তায় সঠিক

অবস্থানটি দেখাচ্ছিল। আমাদের সামনে আরেকটি গাড়ি ছিল।

তাকে সে মোটেও হর্ণ দিল না। গতি কমিয়ে এডজাষ্ট করে নিল

নিজেকে।

আমি মার্ককে বললাম, ও কি ওভারটেক করতে পারবে?

মার্ক বললো, হুম পারবে। তবে এখন যে ট্রাফিক, তাতে ওভারটেক

করার প্রয়োজন নেই। তাই সে ওভারটেক করবে না।

আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে কখন ওভারটেক

করতে পারবে?

মার্ক হেসে দিয়ে বললো, আমার এই গাড়িটি কয়েকবার

ওভারটেক করেছে। তবে আমি নিজেও জানিনা, কেন তখন

ওভারটেক করেছিল। আর এগুলোর অনেক কিছুই এখনও প্রকাশ

করা যাবে না; কারন লজিক পরিবর্তন হতে পারে। তুমি নিশ্চয়

খেয়াল করেছে, এই গাড়ির ভেতরের লজিক নিয়ে খুব

একটা লেখালেখি হচ্ছে না।

গাড়িটি ডানে মোড় নিয়ে গুগলের পেছনের রাস্তা দিয়ে দ্রুত

ছুটে গেলো। তারপর আরো দু'বার ডানে টার্ন নিয়ে গুগলের

সামনের রাস্তায় চলে এলো। এই সড়কে গাড়ির পরিমান বেশি।

পাশাপাশি অনেক গাড়ি। আশেপাশের গাড়ি থেকে মানুষ

তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি একটু লজ্জাও পাচ্ছিলাম।

গাড়িটি এবারে বাঁয়ে মোড় নেবে। আবার ট্রাফিক

লাইটে দাঁড়িয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না, ঠিক

কিভাবে সে বুঝতে পারছিল লাল বাতি জ্বলছে। বাতিটি যখন

সবুজ হলো, মুহুর্তেই সে বুঝতে পারলো। খুব সুন্দর স্মুথ

করে বাঁয়ে ঘুরিয়ে দিয়ে ছোট রাস্তায় ওঠে এলো। তারপর

একটি স্পীড ব্রেকার। সেখানেও গাড়িটি গতি কমালো।

আমি মার্ককে জিজ্ঞেস করলাম, এটা জানলো কিভাবে?

পার্কিং লটে নিজে নিজেই ঘুরে বেড়াচ্ছে রোবট চালিত

গাড়ি

মার্ক সেই একই রকম হাসি দিয়ে বললো, তুমি আমার

চাকরি খাবে নাকি? এতো কিছু বলা যাবে না।

আমি মার্ককে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, না না।

আমি চাইনা আমার জন্য তোমার কোনও ক্ষতি হোক।

তুমি যে আমাকে এই গাড়িতে এখন উঠতে দিয়েছো, তাতেই

আমি খুশি। তবে, গাড়িটি বাজারে আসবে কবে?

মার্ক ওয়্যারলেসে কারো সাথে একটু কথা বললো। তারপর আমার

দিকে তাকিয়ে বললো, দুঃখিত। গাড়িটি হয়তো আগামী বছর

বাজারে আসতে পারে। তবে তুমি আমার কোনও কথাই বিশ্বাস

করো না। আমার কাজ হলো এটাকে পরীক্ষা করা।

এটা কবে কিভাবে বাজারে আসবে তার কিছুই আমি জানি না।

গাড়িটি একটু হালকা ব্রেক করলো। আমি মার্ককে বললাম,

কোথায় কোথায় তোমরা এটাকে পরীক্ষা করছো?

মার্ক বললো, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ইউটাহ

আরো কয়েকটি রাজ্যে পরীক্ষা করার অনুমতি পাওয়া গেছে।

আমি আবারো বললাম, গাড়িটি কি এখন পুরোপুরি নিজেই

চলতে পারে?

মার্ক পাল্টা প্রশ্ন করলো, তোমার কী মনে হলো?

আমি গাড়িটির পার্ক করা দেখছিলাম। মার্কের

দিকে না তাকিয়ে বললাম, তেমন কিছু

ঝামেলা তো নজরে পড়লো না।

হয়তো হাইওয়ে গেলে আরো বোঝা যাবে।

গাড়িটি সুন্দর করে পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে গেলো। মার্ক

বললো, নাহ, এখনও আরো কিছু উন্নয়ন দরকার আছে। এটা যেহেতু

মানুষের জীবন নিয়ে কাজ হবে, তাই আরো অনেক

পরীক্ষা নিরীক্ষার পর হয়তো রাস্তায় ছাড়া হবে।

আমি আবারো প্রশ্ন করলাম, তোমরা কি সারাক্ষণ গাড়ির

সাথে থাকো?

মার্ক বললো, এখন পর্যন্ত তাই।

আমি গাড়ি থেকে নেমে এলাম। সাথে মার্ক। ওর সাথে হ্যান্ড

শেক করে আরো অনেক ধন্যবাদ দিলাম। মার্ক

হাসতে হাসতে বললো, এটা একটা মজা, তাই না?

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, হুম অনেক মজা।i

এই লেখাটি এখান থেকে কপি করা

মাইন লিনক http://www.priyo.com/zswapan/2013/09/20/32228.html







via টেকটিউনস http://www.techtunes.com.bd/news/tune-id/242095

0 comments:

Post a Comment

 
Top